কর্ম না করে ও Logical fallacy দিচ্ছে ধার্মীকরা

পাগল শব্দটি বড়ই মজার। তিন অক্ষরের শব্দের অভিব্যক্তি বহু বিচিত্র। এটি যেমন ব্যক্তির মানবিক অস্তিত্বের এক বিপর্যস্ত অবস্থাকে নির্দেশ করে থাকে অর্থাৎ যার মাথাটি ফাঁকা তাকে যেমন বুঝায় তেমন যার মাথায় সাধারণের তুলনায় মাল-মশলা একটু বেশি তাদেরকেও বুঝায়। অনেক সৃষ্টিশীল খেয়ালি মানুষ শব্দকে নামের আগে খেতাব হিসেবে ব্যবহার করে নিজেকে প্রকাশ করেন। আমার কাছে সেই পাগল তিন দরণের যেমনঃ ১/ জাতিয় পাগল ২/ Logical fallacy পাগল 3/ Really crazy. এই শব্দের গুনাগুণ কখনো অপমানজনক গালি হিসেবে ব্যবহার হয় আবার এ শব্দ দিয়ে পরম মমতারও প্রকাশ ঘটে। যেমনঃ
১। জাতিয় পাগল
কথনে লেখনে সমাজে সাহিত্যে শব্দের ব্যাপক উপস্থিতি। জন্মদাত্রী মায়ের কাছে প্রতিটি সন্তানই পাগল। আমারপাগল ছেলেবলে প্রত্যেক মা নিজ সন্তানের প্রতি তার শ্রেষ্ঠতম সোহাগটি দান করেন। প্রায় সব বাঙ্গালীই প্রথমবারের মত পাগল খেতাবটি অর্জন করে স্নেহময়ী মায়ের কাছ থেকে। আবার সেই নারীই যখন স্বামী বেচারার বিশেষ একটি সখ বা নেশার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন-লোকটা বয়সেও যাত্রা নাটকের জন্য পাগলতখনও পাগল শব্দটির ব্যঞ্জনা অন্য রকম হয়।
Beja Shohor Blog
কর্ম না করে ও Logical fallacy দিচ্ছে ধার্মীকরা
সোহাগে আদরেও প্রিয়তমা পত্নীর মানভঞ্জন করতে না পেরে যখন বলে-আহা,পাগলামি করোনাতো তখন পাগলামির আরেক মাত্রা প্রকাশ করে। আবার স্বামীর খুনসুটিতে বিগলিত স্ত্রী যখন বলে-কী পাগলামি শুরু করেছতখন তা হয়ে ওঠে পাগলামির উষ্ণতম এক প্রকাশ। মান্না দে যখন গানতুমি যখন পাগল বলো ধন্য যে হয় সে পাগলামিতখন আক্ষরিক অর্থেই সেই পাগলামি রোমান্টিকতার এক অনন্য দ্যোতনা পেয়ে যায়। দিলরুবা খানেরপাগল মনতো এক সময় সকল সঙ্গীত পাগলকেই পাগল করে ছেড়েছিল। লাইলী প্রেমে মজনু পাগল শিরী প্রেমে ফরহাদ পাগল আর নর নারীর পরস্পরের প্রেমে পাগল হওয়ার আকুতি আর আবেগ নিয়ে কত গাঁথা কাহিনী গল্প উপন্যাস কাব্য মহাকাব্য গান রচিত হয়েছে তার পরিসংখ্যান দেয়া কি সম্ভব? নর নারীর এই পাগলামি হলো ভাবের কিন্তু এই ভাবের পাগল বাস্তব পাগলে রূপান্তরিত হওয়ার নজীরও অনেক। স্কুলজীবনে আমার এক সুন্দরী সহপাঠিনীর প্রেমে পড়েছিলেন এক মেধাবী সিনিওর ভাই। প্রাইভেট পড়ানো থেকে শুরু। দিনে দিনে মেধাবী মানুষটির অন্তরে এই প্রেম মহীরুহ হয়ে ওঠে কিন্তু সহপাঠিনীর বিয়ে হয়ে যায় এক পুলিশ কর্মকর্তার সাথে। কেচ্ছাকাহিনীর মজনুকে দেখেছিলাম এই বড় ভাইয়ের কাছে। তার পড়ালেখা গেল। সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত গেল। সমাজ সংসার ভেসে গেল। দেখতাম তসবি জপের মতো তিনি অনবরত সেই প্রেমিকার নাম জপছেন।এই জপতপ করতে করতেই একদিন তিনি ভবলীলা সাঙ্গ করলেন। শরৎচন্দ্রেরদেবদাস এক সময় পাগলের চূড়ান্ত পর্যায়েই চলে গিয়েছিল। আর এই পাগলামি যদি উন্মত্ততার পর্যায়ে চলে যায় তখন আরেক বিপদ। তার জলজ্যান্ত প্রমাণ সিলেটের খাদিজার উপর প্রেমিক বদরুলের বেপরোয়া হামলা।
/ Logical fallacy পাগল

আমি বললাম, পাখি পাকা পেঁপে খায়।
আপনি বললেন, পাখি যখন পাকা আম খেয়েছে তখন আপনি কই ছিলেন? আজকে পাকা পেঁপে খাওয়ার সময় দেখতে এসেছেন কেন? এটা কুযুক্তি। কারণ, পাকা আম খাওয়ার সময় আমি কিছু বলি নি। তার মানে এই না যে পাখির এই পাকা পেঁপে খাওয়াটা ঠিক কাজ হচ্ছে। এই কুযুক্তির নাম Appeal To Hypocrisy. ঠিক তেমনি কুযুক্তিক দেওয়ার জন্য ধর্মীয়নিয়ন্থকরা উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ ধর্ম ব্যবসাতে তো তাদের লুব লালসা আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার মত। তাই তারা সমাজের বোকাসোকা মানুষদের ছলে বলে কৌশলে তাদের ধর্মের অজুহাত দেখিয়ে টাকা নিচ্ছে। ঠিক Logical fallacy ধারা তাদের ভণ্ডামির প্রকাশ পায়। তাই পাগলদের মধ্যে তাদের পাগলামি যেনও হাস্য কর। আমার মতে এই কুযুক্তিক পাগলদের কারাগারে বন্ধী করা উচিত। তাদের যুক্তিগুলু সাধারণ মানুষকে ব্যাইন উওয়াস করতে সময় লাগে না। তাদের emotional যুক্তি হবে..এতো সুন্দর একটা পাখি। কি সুন্দর ডাকে। কি সুন্দর তার চলন তার পক্ষে পাকা পেঁপে খাওয়া সম্বব, আপনিই বলেন? এই যুক্তির নাম Emotional Appeal. আপনাকে ইমেশনাল ব্ল্যাক মেইল করা হচ্ছে। তেমনি হাজার কুযুক্তিক ধারা অকর্মক ধর্মীয়নিয়ন্থকরা আপনাকে ভুলবাল বুঝাবে। কাজেই faulty logic ধারা বিতারিত হওয়া এক অমানবিক সিন্ধান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।
/ Really Crazy

যারা এই পাগল সংহিতা লেখাটি পড়ছেন তাদের চোখের সামনেও নিশ্চয় কিছু চিরচেনা অপ্রকৃতিস্থ মানুষের ছবি স্পষ্ট ফুটে উঠছে। আমরা কত মানব মহামানব এমনকি কত চোর বাটপাড়কে নিয়েও লিখি কিন্তু এই মানুষগুলোতো কখনও আমাদের লেখার বিষয়বস্তু হয়না। অথচ এরাও আমাদের মত মানুষ। এদেরও একদিন সমাজ সংসার ছিল। জৈবিক চাহিদা মানবিক সকল অনুভবেই পরিপূর্ণ ছিল তারা কিন্তু মাথার কিছু তার এলোমেলো হয়ে যাওয়াতেই কিনা তারা অন্য মানুষ হয়ে গেল। মানুষ বটে তবুও মানবপংক্তিভুক্ত নয়। ক্ষ্যাপা পাগলে আমার ভয় হয় কিন্তু নিরীহ খেয়ালী পাগলদের প্রতি আমার খুব আগ্রহ। আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে এদের আচার আচরণ পর্যবেক্ষণ করি। জানি এতে এদের কিছু আসে যায়না কিন্তু একটা লাভ হয় অন্তত, আমার দিক থেকে এরা কোনো আক্রমন বা শান্তিভঙ্গের  আশংকা করেনা। আমাকেও তাদের মতই নিরীহ মনে করতে পারে। একবার এক নিরীহ পাগলি কিছু কান্ডজ্ঞানহীন মানুষ দ্বারা উত্যুক্ত হয়ে বিশাল এক মাটির দলা ছুঁড়ে মেরেছিল কিন্তু ঢিলটি উত্যুক্তকারীদের দিকে না গিয়ে ছুটে  আসে আমার দিকে। আমি খুব দ্রুততার সাথে হাত দিয়ে তা প্রতিহত করি। কিঞ্চিত আহত হয়ে পাগলিকে কিছু না বলে আমি যখন উত্যুক্তকারীদের ভর্থসনা করছিলাম তখন সেই পাগলির চোখেমুখে বিপুল বিষ্ময় এবং কৃতজ্ঞতা ফুটে উঠতে দেখেছিলাম। তার অভিব্যক্তি থেকেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম একটুখানি মানবিক আচরণ পেলে তার পাগলামি অনেকটাই কমে যেত। আমি যে ছোট্ট শহরের স্মৃতি বুকে নিয়ে বড় হয়েছি সেই শহরটি খুব পাগলবান্ধব ছিল। পাগলরা বেশ নিরাপদেই সেখানে থাকত কিন্তু বনেদি পাগলরা নতুন পাগলের আগমনকে খুব ভালভাবে নিতনা। এক পাগলের নাম ছিল গোপাল। শহরে নতুন কোনো পাগলের আগমন ঘটলেই গোপাল তাদের লাঠি হাতে তাড়া করত। বলতপুরান পাগলের ভাত নাই নতুন পাগলের আমদানী। পাগল হয়েও কেমন শ্রেণী সচেতন! আরেকজনের নাম ছিল সুরেশ। খুব কামেল পাগল এই ধারণায় মহাজন এবং সাধারণ্যে খুব খাতির ছিল সুরেশের।নবীগঞ্জের কুখ্যাত গণ-হত্যার সময় এই সুরেশও রেহাই পায়নি। যিনি তার লাশটি শাখাবরাক নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন তার মুখ থেকে তার হত্যার বিবরণ শুনে বুকে এতটাই লেগেছিল যে সেই বয়সে পুরো এক গানই লিখে ফেলেছিলাম তাকে নিয়ে।শাখাবরাক নদীরে শুনি তোর দীর্ঘশ্বাস,তোর জলে ভাইসা গেল সুরেশ পাগলার লাশএই রকম। শুধু লিখা নয় সুরও দিয়ে ফেলেছিলাম সে গানের। সম্ভবত জীবনের প্রথম এবং শেষ প্রয়াস।
জ্ঞানহারা সবাক অথবা নির্বাক মানুষগুলোর এক অংশ রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ায় এবং অসভ্য মানুষের বর্বর আক্রমনের শিকার হয়। অকারণে এদের ক্ষ্যাপায়। ঢিল ছুঁড়ে।পাল্টা ঢিল ছুঁড়লে আঘাতে আঘাতে রক্তাক্ত করে। অন্য অংশকে দৈবজ্ঞানসম্পন্ন মনে করে ভক্তি শ্রদ্ধাও করে। ঢিল ছুঁড়া আর ভক্তি শ্রদ্ধা করা দুই দলই ভ্রান্ত যদিও শেষোক্তদের অজ্ঞতার কারণে অসহায় মানুষগুলো অন্ততঃ দুমুটো খেতে পায়। একটু আদর আহলাদ ভালোবাসা পায়। কিন্তু এর বিপদ অন্যখানে। মরলে পরে গাভী যেমন দুধেল হয়, কাস্তে হারালে  হয়ে যায় দা তেমনি পাগল মরে গেলে পির হয়ে যায়। তার নানা কেরামতির খবর চার দিকে চাউর হয়ে পড়ে। পাগলের কবর হয়ে যায় মাজার। প্রথমে সেখানে মোমবাতি জ্বলে। মৃত্যুর পর ঘরহীন মানুষটির ঘর হয়। প্রথমে চাপড়া তারপর দালান। সামরিক অফিসার  থেকে শুরু করে ঘুষখুর আমলা টাকার ভান্ডিল নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মাজারে। কিছু মানুষ রাতারাতি আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যায়। সবই হয় পাগলের কল্যাণে।

Post a Comment

0 Comments