God and the World | ইশ্বর ও জগৎ

পরম তত্ত্বই ইশ্বর : এরিস্টটলের মতে শেষ বা পরিণতি অর্থাৎ যা লক্ষ্য তাই হচ্ছে গতির কারণ। কালের দিক থেকে কারণ কার্যের আগে। লক্ষ্য বা পরিণতি অথবা আকার চিন্তায় ও বাস্তবে উভয়ক্ষেত্রেই আদিতে থাকে, যদিও কালগতভাবে তা থাকে শেষে। আদি কারণ বা পরম তত্ত্ব কী?  যা থেকে জগতের উদ্ভব হয়েছে? এর জবাবে এরিস্টটল বলেন যে, পরমতত্ত্ব হলো পরিণতি বা লক্ষ্য অর্থাৎ আকার (form) । আকার যেহেতু সার্বিক বা ধারণা (idea) সেইহেতু তাই পরম তত্ত্ব যা সমগ্র জগতের মূল ভিত্তি। যে পরম তত্ত্ব থেকে সমগ্র জগতের উদ্ভব তাকে জগতের বিকাশের শেষে স্থাপন করলে এবং শেষ কারণ বা পরিণতিকে প্রথমে স্থাপন করলে আমাদের কাছে অদ্ভুদ মনে হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা অদ্ভুত নয়। এই পরমতত্ত্বই হচ্ছেন ইশ্বর।

ইশ্বরের সাথে জগতের সম্পর্ক কালিক নয়, যৌক্তিক : ইশ্বরের সাথে জগতের যে সম্পর্ক তা কালগত নয়। সাধারণ মানুষ মনে করে যে, জগতের উদ্ভবের পূর্ব থেকেই ইশ্বর আছেন এবং এক সময় তিনি জগৎ সৃষ্টি করেছেন। পরম সত্তাকে তাই জগতের কারণ এবং জগৎকে তার কার্য মনে করা হয়। কালের দিক থেকে কারণ কার্যের পূর্বে থাকে। যদি মনে করা হয় যে, জগতের কোনো আদি কারণ নেই তাহলে প্রথম কারণ স্বীকারেরও প্রয়োজন নেই। কিন্তু ইশ্বর ও জগতের সম্পর্ক কারণ ও কার্যের সম্পর্ক বা কালগত সম্পর্ক নয়। এ সম্পর্ক হচ্ছে যৌক্তিক (Logical) সম্পর্ক। যুক্তিবিদ্যায় যেমন আশ্রয় বচন থেকে সিদ্ধান্ত অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়, তেমনি ইশ্বর হলেন যৌক্তিক আশ্রয় বচন যার সিদ্ধান্ত হচ্ছে এ জগৎ। কাজেই ইশ্বরকে মেনে নিলে তা থেকে জগৎ অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হবে। ন্যায় অনুমানে আশ্রয় বচন আগে আসে, সিদ্ধান্ত আসে পরে। কিন্তু এই আগে -পরের বিষয়টি শুধু চিন্তায়, কালের দিক থেকে নয়। অর্থাৎ এই পারস্পর্য যৌক্তিক, কালিক নয়। অনুরুপভাবে এরিস্টটল যাকে পরম সত্তা বা আকার বলেন তা যুক্তির দিক থেকে প্রথম, কালের দিক থেকে নয়। যদিও ‘আকার’ হচ্ছে পরিণতি তবু চিন্তার দিক থেকে তাহলো সর্বপ্রথম অর্থাৎ আরম্ভের প্রথম বিন্দু অর্থাৎ জগতের ভিত্তি। কালিক পারস্পর্যে বাঁধা বস্তুসমূহ লক্ষ্য বা পরিণতির দিকে যাবার চেষ্টা করে। কিন্ত চরম পরিণতি কালগত  না হওয়ায় কোনো বস্তই তার চরম পরিণতিতে পৌঁছতে  পারে না। কালের দিক থেকে জগতের আদি নেই, অন্তও নেই।

God and the World

এরিস্টটলের ইশ্বর কি ব্যাক্তি? (Is Aristotle's God a Person?) : ইশ্বর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কি না প্লেটোর দর্শনের মতো এরিস্টটলের দর্শনেও তা স্পষ্ট নয়। কোনো গ্রিক দার্শনিকই এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করেননি। কারণ ব্যক্তিত্বের ধারণাটিই আধুনিক কালের। স্টেইসের মতে, ইশ্বর প্রসঙ্গে  আলোচনা করতে গিয়ে এরিস্টটল যে সকল ভাষা ব্যবহার করেছেন তার জন্য  এ  প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, এরিস্টটল পরম সত্তা বা বিশ্তদ্ধ আকার কথাগুলো ব্যবহার না করে, ‘ইশ্বর’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন বলেই ইশ্বরের ব্যক্তিত্বের প্রশ্নটি দেখা দিয়েছে। তাছাড়া এরিস্টটল যখন বলেন যে, ইশ্বর এক পরম আনন্দের মধ্যে বাস করেন এবং তাঁর আনন্দ হলো তাঁর নিজের চিরস্থায়ী অনুধ্যান তখন আক্ষরিক অর্থে ইশ্বরকে এক সচেতন ব্যক্তি বলে মনে হয়।

Post a Comment

0 Comments