সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদের প্রকৃতি প্রেক্ষাপটে উভয়ের মধ্যে যেসব পার্থক্য উল্লেখ করা যায় তাহলো :
সৃষ্টিবাদ অনুসারে কোন এক দৈবশক্তি বা ইশ্বর বিশেষ এক মুহূর্তে এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করলেন এবং বললেন- ‘হও’, অমনি সমগ্র পৃথিবী এবং সবধরণের বস্তু ও ঝীবজগৎ সৃষ্টি হয়ে গেলো। পক্ষান্তরে বিবর্তনবাদ অনুসারে এ বিশ্বজগৎ এক সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয় পরিণতি। অর্থাৎ এ জগৎ কেউ সৃষ্টি করেনি, বরং এটি প্রকৃতির এক স্বতঃস্ফূর্ত ক্রমবিকালের ফল।
সৃষ্টিবাদে বলা হয়েছে, মহাপরাক্রমশালী ইশ্বর অনাদিতে বিশেষ এক মুহূর্তে ইচ্ছা করেছিলেন বলে জগৎ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বিবর্তনবাদের বক্তব্য হলো-কারো ইচ্ছায় আকস্মিকভাবে এ বিশ্ব সৃষ্টি হয় নি, বরং প্রাকৃতিক শক্তির প্রণোদনায় সময়ের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে ঘীরে ঘীরে এ জগৎ সৃষ্টি হয়েছে, এক্ষেত্রে বিশেষ মুহূর্তের বিষয়টি অবান্তর।
সৃষ্টিবাদ অনুসারে ইশ্বর সৃষ্টির সময় এ বিশ্বজগৎ যেমনটি ছিলো আজও তেমনটিই আছে, এর কোন পরিবর্তন হয় নি বা হতে পারে না। অন্যদিকে বিবর্তনবাদের মূল কথাই হলো- পরিবর্তন। বিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে ধীর গতিতে এর নানামুখী পরিবর্তন হয়েছে এবং এরূপ পরিবর্তন অব্যাহত গতিতে আজও এগিয়ে চলেছে।
সৃষ্টিবাদে দাবি করা হয় যে, সৃষ্টির পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অবস্থার মধ্যে কোনোরূপ অনিবার্য বা অবিচ্ছিন্ন সম্বন্ধ পরিলক্ষিত হয় না। কেননা সৃষ্টির সবক্ষেত্রে স্রষ্টার প্রভাব ও অভিব্যক্তি একরকম। পক্ষান্তরে বিবর্তনবাদে জগৎ সৃষ্টির পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অবস্থার মাঝে একটা সুস্পষ্ট সংযোগ পরিলক্ষিত হয়। কেননা পরবর্তী অবস্থাটি পূর্ববর্তী বৈশিষ্ট্যের অনিবার্য প্রকাশ।
সৃষ্টিবাদে আমরা এর দুটি রুপ দেখতে পাই, যথা-- নিরপেক্ষ সৃষ্টিবাদ ও সাপেক্ষ সৃষ্টিবাদ। এ দুটি তত্ত্ব পরস্পর বিরোধী। কারণ সাপেক্ষ সৃষ্টিবাদ জগৎ সৃষ্টির জন্য পূর্বস্থিত উপাদানের কথা স্বীকার করে, অথচ নিরপেক্ষ সৃষ্টিবাদ অনুসারে স্রষ্টা নিতান্ত শূন্য থেকে এ বিশ্বব্রক্ষাণ্ড সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু বিবর্তনবাদ একটি বিজ্ঞানসম্মত মতবাদ হিসেবে বিরোধহীন, সর্বজনগ্রাহ্য ও যুক্তিযুক্ত। এ মতবাদটি এককথাই প্রকাশ করে যে, এ বিশ্বপ্রকৃতি এক সুনীর্ঘ ক্রমবিকাশের অনিবার্য পরিণাম।
0 Comments