সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদের মধ্যকার পার্থক্য - Difference between theory of Creation and Evolution

সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদের প্রকৃতি প্রেক্ষাপটে উভয়ের মধ্যে যেসব পার্থক্য উল্লেখ করা যায় তাহলো :

সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদের মধ্যকার পার্থক্য

  1. সৃষ্টিবাদ অনুসারে কোন এক দৈবশক্তি বা ইশ্বর বিশেষ এক মুহূর্তে এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করলেন এবং বললেন- ‘হও’, অমনি সমগ্র পৃথিবী এবং সবধরণের বস্তু ও ঝীবজগৎ সৃষ্টি হয়ে গেলো। পক্ষান্তরে বিবর্তনবাদ অনুসারে এ বিশ্বজগৎ এক সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ায় স্বয়ংক্রিয় পরিণতি। অর্থাৎ এ জগৎ কেউ সৃষ্টি করেনি, বরং এটি প্রকৃতির এক স্বতঃস্ফূর্ত ক্রমবিকালের ফল।
  2. সৃষ্টিবাদে বলা হয়েছে, মহাপরাক্রমশালী ইশ্বর অনাদিতে বিশেষ এক মুহূর্তে ইচ্ছা করেছিলেন বলে জগৎ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু বিবর্তনবাদের বক্তব্য হলো-কারো ইচ্ছায় আকস্মিকভাবে এ বিশ্ব সৃষ্টি হয় নি, বরং প্রাকৃতিক শক্তির প্রণোদনায় সময়ের বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে ঘীরে ঘীরে এ জগৎ সৃষ্টি হয়েছে, এক্ষেত্রে বিশেষ মুহূর্তের বিষয়টি অবান্তর।
  3. সৃষ্টিবাদ অনুসারে ইশ্বর সৃষ্টির সময় এ বিশ্বজগৎ যেমনটি ছিলো আজও তেমনটিই আছে, এর কোন পরিবর্তন হয় নি বা হতে পারে না। অন্যদিকে বিবর্তনবাদের মূল কথাই হলো- পরিবর্তন।  বিশ্ব সৃষ্টির পর থেকে ধীর গতিতে এর নানামুখী পরিবর্তন হয়েছে এবং এরূপ পরিবর্তন অব্যাহত গতিতে আজও এগিয়ে চলেছে।
  4. সৃষ্টিবাদে দাবি করা হয় যে, সৃষ্টির পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অবস্থার মধ্যে কোনোরূপ অনিবার্য বা অবিচ্ছিন্ন সম্বন্ধ পরিলক্ষিত হয় না। কেননা সৃষ্টির সবক্ষেত্রে স্রষ্টার প্রভাব ও অভিব্যক্তি একরকম। পক্ষান্তরে বিবর্তনবাদে জগৎ সৃষ্টির পূর্ববর্তী ও পরবর্তী অবস্থার মাঝে একটা সুস্পষ্ট সংযোগ পরিলক্ষিত হয়। কেননা পরবর্তী অবস্থাটি পূর্ববর্তী বৈশিষ্ট্যের অনিবার্য প্রকাশ।
  5. সৃষ্টিবাদে আমরা এর দুটি রুপ দেখতে পাই, যথা-- নিরপেক্ষ সৃষ্টিবাদ ও সাপেক্ষ সৃষ্টিবাদ। এ দুটি তত্ত্ব পরস্পর বিরোধী। কারণ সাপেক্ষ সৃষ্টিবাদ জগৎ সৃষ্টির জন্য পূর্বস্থিত উপাদানের কথা স্বীকার করে, অথচ নিরপেক্ষ সৃষ্টিবাদ অনুসারে স্রষ্টা নিতান্ত শূন্য থেকে এ বিশ্বব্রক্ষাণ্ড সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু বিবর্তনবাদ একটি বিজ্ঞানসম্মত মতবাদ হিসেবে বিরোধহীন, সর্বজনগ্রাহ্য ও যুক্তিযুক্ত। এ মতবাদটি এককথাই প্রকাশ করে যে, এ বিশ্বপ্রকৃতি এক সুনীর্ঘ ক্রমবিকাশের অনিবার্য পরিণাম।

Post a Comment

0 Comments