বার্কলীর আত্মগত ভাববাদ | Subjective Idealism of Berkeley

আত্মগত ভাববাদ হচ্ছে এক ধরনের একত্ববাদী অধিবিদ্যক মতবাদ, যা শুধু মানসিক দ্রব্যকে অস্তিত্বশীল বলে মনে করে। এটি অজড়বাদের মতো বস্তুর অস্তিত্বকে সম্পুর্ণরুপে অস্বীকার করে। একে নিসর্গবাদ বা অভিজ্ঞতাদের সংমিশ্রণ বলে উল্লেখ করা হয়। তত্ত্বটিকেআত্মগতবলে নির্দেশ করা হয় এজন্য নয় যে- এটি বস্তুসত্তাকে সম্পূর্ণরুপে অস্বীকার কওে বরং কারণে যে, এটি বস্তু জগতের সত্যতাকে সর্ম্পর্লরুপেআত্মগতবামনোগতবলে দাবি করে। আত্নগত ভাববাদের প্রাচীনতম রুপের সন্ধান পাওয়া যায় বুদ্ধদেবের ‘Yogacara’ (ইয়োগাকারা) তত্ত্বের মধ্য দিয়ে যাতে মনের প্রত্যক্ষণ বা ধারণাকে বস্তুজগতের অস্তিত্বের কারন বলে ধরা হয়। প্লেটো, প্লটিনাস এবং হিপ্পো অগাস্টিনের চিন্তাতেও আত্মগত ভাববাদের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাছাড়া আত্মাগত পদ্ধতির সুনির্দিষ্ট রুপের অভিব্যক্তি দেখা যায় পিরহোবাদীদেও চিন্তায়। তবে সপ্তম শতাব্দীতে সর্র্বপ্রথম আত্মগত ভাববাদের পরিপক্ক প্রকাশ ঘটে ‘Yogacarin’ (ইয়োগাকারিন) চিন্তাবিদদের মধ্যে। কারণ তাঁরা পরমসত্তাকে ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষণের সাথে একীভূত করে জানার চেষ্টা করেছিলেন।

 

আত্মগত ভাববাদ অনুসারে, একমাত্র মন বা আত্না এবং তাদের ধারণা বা প্রত্যয় হচ্ছে অস্তিত্বশীল। মতবাদের অনুসারীরা মনে করেন অভিভজ্ঞতার বিষয়সমূহ বস্তুগত পদার্থ নয়, এগুলো নিতান্তই মনোগত ধারণা। দৃশ্যমান জগতে পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গল, নদী-নালা, ঘর-বাড়ি ইত্যাদি সবই কোন না কোন মনের ধারণা। এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, মতবাদ বস্তুজগতের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে না, বরং একজন জ্ঞাতার মনের ওপর বস্তুসমূহের অস্তিত্ব নির্ভরশীল বলে মনে করে। উল্লেখ্য, সাধারণভাবেঅস্তিত্বকথাটি যে অর্থে ব্যবহৃত হয়, আত্নগত ভাববাদীরা তাকে সেভাবে গ্রহণ না করে একান্তভাবে মনের ধারণা বলে গ্রহণ করেন। বস্তুত আইরিশ দার্শনিক বিশপ জর্জ বার্কলি (১৬৮৫-১৭৫৩) আত্মগত ভাববাদের সর্বশ্রেষ্ট প্রবক্তা বলে পরিগণিত হন। তিনি নিজের দর্শনকেঅজড়বাদ’ (immaterialism) নামে আখ্যায়িত করেন। তাছাড়া এটিমানসবাদ’ (Menalism) বাঅভিজ্ঞতাবাদী ভাববাদ’ (empirical idealism) নামে পরিচিত।

Subjective Idealism of Berkeley | Beja Shohor Blog

বার্কলি মূলত জন লকের ‘বিজ্ঞানসম্মত বাস্তববাদ’-এর সমালোচনার মধ্য দিয়ে তাঁরআত্মগত ভাববাদপ্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি জ্ঞান তাত্ত্বিক মতবাদ হিসেবে বিশ্বজগতকে ব্যক্তির মন বা জ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল বলে নির্দেশ করে। বার্কলির মতে- পরিদৃশ্যমান জগতে বস্তু অবস্থান করলেও মানসিক জগতেই শুধু অস্তিত্বশীল। আর এই অস্তিত্বশীল মন যখন বস্তু জগতকে জানতে পারে তখনই শুধু তা অস্তিত্বশীল বলে প্রতীয়মান হয়। তা না হলে বাহ্য জগৎ অস্তিত্বশীল হতে পারে না। অর্থাৎ জ্ঞায়বস্ত সম্পর্কিত জ্ঞান সম্পূর্ণরুপে জ্ঞাতার মনের উপর নির্ভরশীল। মনের ধারণা হিসেবে যখন জ্ঞাতা বাহ্য জগতকে জানতে পারে একমাত্র তখনই ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করে। সুতরাং বস্তুর মন-নিরপেক্ষ কোন স্বতন্ত্র সত্তা নেই। অথচ লক দেখান যে, আমরা প্রত্যক্ষভাবে যা জানি তা হলো মনের ধারণা এবং সেই ধারণার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে বস্তুকে জানা সম্ভব হয়। বার্কলি লকের কথার বিরোধিতা করে বললেন যে, আমরা যদি সরাসরি শুধু মনের ধারণাকেই জানতে পারি, তবে ধারণার অন্তরালে কোন বস্তু আছে একথা বলার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। আমরা যা প্রত্যক্ষ করি তাহলো মন এবং মনের ধারণা, এর বেশি কিছু স্বীকার করার প্রয়োজন নেই।

Post a Comment

0 Comments